পদার্থবিদ্যা - পদার্থবিজ্ঞান – ২য় পত্র - হিস্টোরিসিস লেখচিত্র

    ৪.২৫ চিত্রের লেখ-এর সাহায্যে Bo এর মান কীভাবে Bo এর সাপেক্ষে পরিবর্তিত হয় তা ব্যাখ্যা করা হয়েছে। এখানে B হচ্ছে ফেরোচৌম্বক পদার্থের মধ্যস্থ চৌম্বকক্ষেত্র এবং Bo হচ্ছে চুম্বকায়নকারী ক্ষেত্র।

চিত্র :৪.২৫

   পরীক্ষাধীন ফেরোচৌম্বক পদার্থের নমুনাটি সূচনাতে অচুম্বকিত অবস্থায় আছে এবং তা রেখের O বিন্দু দ্বারা নির্দেশ করা হচ্ছে। Bo এর মান বৃদ্ধির সাথে সাথে B এর মান OP বরাবর বৃদ্ধি প্রাপ্ত হয়ে P বিন্দুতে এর সম্পৃক্ত মান (saturation value) Bs-এ পৌঁছে। এখন Bo-এর মান শূন্য করা হলে Bo-এর মান সামান্য হ্রাস পেয়ে Br হয়। এই অবস্থা Q বিন্দু দ্বারা নির্দেশ করা হচ্ছে এবং নমুনাটিতে কিছু চুম্বকত্ব রয়ে গেছে। নমুনাটিতে যে পরিমাণ চৌম্বকক্ষেত্র অবশিষ্ট রয়ে যায় তাকে রিমেনেন্স (remanence) বা চৌম্বক ধারণ ক্ষমতা ( retentivity) Br বলে। B-এর মান শূন্যে নিয়ে আসার জন্য Bo এর পশ্চাদ্বর্তী চৌম্বকক্ষেত্র প্রয়োগের প্রয়োজন হয়।

  Bo এর যে মান B-কে শূন্যে নামিয়ে আনে তাকে অর্থাৎ Bo কে কোয়েরসিড বল বা সহনশীল বল (Coercive force) বলে। Boluo.-কে নমুনার সহনশীলতা (coercivity) বলে। বিপরীত ক্ষেত্রকে যদি আরো বাড়ানো হয় তাহলে নমুনাটির পুনরায় চুম্বকায়ন হয় এবং S বিন্দুতে সম্পৃক্ততা পায়। বিপরীত ক্ষেত্রকে শূন্য করে দিলেও নমুনাতে আবার কিন্তু চুম্বকত্ব অবশেষ রয়ে যাবে, যা T বিন্দু নির্দেশ করছে। Bo সম্মুখবর্তীভাবে বাড়িয়ে সর্বোচ্চ আদি মানে আনলে B, TP বরাবর বেড়ে Bo, মান প্রাপ্ত হবে। যখন B-এর মান কমানো হয় (অর্থাৎ P থেকে Q এবং S থেকে T) তখন B এর যে মান পাওয়া যায় তা Bo-কে বাড়ানোর সময়ে প্রাপ্ত মানের চেয়ে বড় হয়। অর্থাৎ নমুনাটি বিচুম্বকায়িত হতে অনীহা বা শৈথিল্য প্রদর্শন করে। এ ঘটনাকে হিস্টোরিসিস (Hysterosis) বলে। PQRSTP-কে হিস্টোরিসি লুপ (Hysteresis loop) বলে।

   কোনো ফেরোচৌম্বক পদার্থে চৌম্বকক্ষেত্র প্রয়োগ করে চুম্বকিত করার পর চৌম্বকক্ষেত্র অপসারণ করে বিচুম্বকিত করতে গেলে সেটি সহজে বিচুম্বকিত হতে চায় না। চৌম্বকক্ষেত্র প্রয়োগের সময় পদার্থের চুম্বকত্ব যে ভাবে বৃদ্ধি পায়, চৌম্বকক্ষেত্র অপসারণের সময় চুম্বকত্ব সে ভাবে হ্রাস পায় না। চৌম্বক পদার্থের বিচুম্বকিত হতে অনীহা বা শৈথিল্য প্রদর্শন করাকে হিস্টোরিসিস বলে।

   যে সকল ফেরোচৌম্বক পদার্থের জন্য সরু হিস্টোরিসিস লুপ পাওয়া যায় সেগুলোকে কোমল চৌম্বক পদার্থ (Soft magnetic material) বলে। 

     হিস্টোরিসিস লেখচিত্র লক্ষ করলে দেখা যায় যে, কোনো পদার্থকে চুম্বকায়নের জন্য যে শক্তির প্রয়োজন বিচুম্বকায়নের সময় সে শক্তি সম্পূর্ণরূপে ফিরে পাওয়া যায় না। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় যে, চুম্বকায়ন ক্ষেত্র B কে সম্পূর্ণরূপে অপসারণ করার পরও পদার্থের মধ্যে কিছু চুম্বকত্ব অবশিষ্ট থেকে যায়, যাকে বিলুপ্ত করার জন্য পশ্চাদ্বর্তী চুম্বকায়ন ক্ষেত্র প্রয়োগ করতে হয়। সুতরাং দেখা যায়, কোনো পদার্থের চুম্বকায়ন ও বিচুম্বকায়নের প্রক্রিয়ায় হিস্টোরিসিসের জন্য কিছু শক্তি অপচয় হয়। এই অপচয়ের পরিমাণ হিস্টোরিসিস লুপ দ্বারা আবদ্ধ তলের ক্ষেত্রফলের সমান ।

    কাঁচা লোহার হিস্টোরিসিসজনিত অপচয় ইস্পাতের চেয়ে কম বলে ট্রান্সফর্মার ডায়নামো ইত্যাদির অন্তর্বস্তু (Core) নির্মাণে ইস্পাতের পরিবর্তে কাঁচা লোহা ব্যবহার করা হয়।

Content added By